এবার ঢাকা মেডিকেলে বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা

এবার ঢাকা মেডিকেলে বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা

এবার করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা যাবে দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেকরোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে আসা যেকোনো রোগী সরাসরি হাসপাতালে হাজির হয়ে বিনা পয়সায় এই পরীক্ষা করাতে পারবেনতিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে

করেনা শনাক্তকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ বুধবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে দুজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলোজি বিভাগআগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হবে

প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনতিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করার বিষয়টি চালু করার জন্য আমরা কয়েক দিন থেকে কাজ করে আসছিআমাদের হাসপাতালে আগে থেকে একটা পিসিআর মেশিন (করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য অপরিহার্য যন্ত্র) ছিলকরোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করার জন্য আনুষঙ্গিক আরও অনেক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট (সরঞ্জামাদি) দরকারসেগুলো আমরা ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছিআমাদের মেডিকেল কলেজের ভাইরোলোজি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে সেই মেশিনগুলো চালুও করেছিআমরা আজ বৃহস্পতিবার থেকে করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করলামআমাদের মেডিকেল কলেজের ভাইরোলোজি বিভাগ পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুতি নিয়ে আজই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেকরোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে আগামীকাল থেকে আমাদের হাসপাতালে চালু হবে
কাদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে, সে ব্যাপারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, যাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হবেন, যাঁরা বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসবেন কিংবা যাঁরা হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কোনো রোগীর ব্যাপারে চিকিৎসক যদি সন্দেহ করেন, তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, তখন চিকিৎসকের সুপারিশ অনুযায়ী ভাইরোলোজি বিভাগ ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করবে এবং করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হবে

এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন রোগী আসেতাদের একটা বড় অংশের না হলেও আমরা লক্ষ করছি, বেশ কিছু রোগীর বিভিন্ন রকমের লক্ষণ এসে যায়অন্য রোগ নিয়ে এসেছে, সেগুলো আমাদের এক্সক্লুড করার দরকার হয়সেটা করার ক্ষেত্রে এই ল্যাবরেটরি আমাদের অনেক সাহায্য করবে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার রিপোর্ট জানা যাবেএই পরীক্ষা করতে রোগীর একটি টাকাও লাগবে নাযদিও পরীক্ষাগুলো খুবই ব্যয়বহুলসরকারের নির্দেশে বিনা মূল্যে করা হবে

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ছয়জন, আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ জনসারা বিশ্বে মারা গেছে ৪২ হাজারের বেশি মানুষশুরু থেকে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করে আসছিল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)তবে অনেকের অভিযোগ ছিল, করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করাতে গিয়ে তাঁরা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন
অবশ্য আজ বুধবার থেকে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)

কিটের কোনো অভাব নেই
করোনাভাইরাস নিয়ে সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক আছে জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এই রোগটি নিয়ে সবার মধ্যে ভীতি আছেএই ভীতি দূর করাটা আমাদের জরুরিঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই ধরনের আইসোলেশন ইউনিট রয়েছেজরুরি বিভাগে আমাদের একটা আইসোলেশন ইউনিট রয়েছেসেখানে রোগীকে রেখে আমাদের সবকিছু করতে হতোহাসপাতালে যারা ভর্তি রোগী আছে, তাদের মধ্যে ভাইরাস পজিটিভ এলে, তাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠাইকরোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছেযদি প্রয়োজন হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হবে

হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তের যে কিট, তা আমরা আইইডিসিআরের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিপ্রথমে আমাদের ৫০০ কিট দেওয়া হয়েছেপর্যায়ক্রমে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কিট সরবরাহ করবে আইইডিসিআরকিটের সংকট এই মুহূর্তে আইইডিসিআরের নেই

২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘এই মুহূর্তে চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ আছেআমরা লক্ষ করছি, আমাদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে অনেকরোগশোক তো মানুষের হচ্ছেবিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেতাদের বিভিন্ন অ্যাডভাইস (পরামর্শ) প্রয়োজন হয়যারা সব সময় আমাদের হাসপাতালে আসত, তারা হয়তো এখন আসতে পারছে নাসেগুলো বিবেচনা করে আমরা একটা নম্বর (পাঁচ ডিজিট) ইতিমধ্যে বিটিআরসির কাছ থেকে নিয়েছিদুই-এক দিনের মধ্যে আমাদের হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়ে যাবে

এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মেডিসিন বিভাগের কাছে দুটো মোবাইল নম্বর থাকবে২৪ ঘণ্টায় যেকোনো মানুষ এই সেবা পাবে২৪ ঘণ্টাই আমাদের হাসপাতালে ডাক্তার থাকেনসার্জারি বিভাগের জন্য একটা রাখছিশিশু বিভাগের জন্য একটা নম্বর থাকবে, কার্ডিওলজি বিভাগের জন্য একটি, প্রসূতি বিভাগের জন্য একটিএ ছাড়া জরুরি বিভাগের জন্য একটা মোবাইল নম্বর রাখছিআগামীকাল এই সেবা চালু করার চেষ্টা করবযদি সম্ভব না হয়, তাহলে শুক্রবার থেকে এই সেবা চালু করবএই নম্বর সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, দেশের বাইরে থেকে অনেক বাংলাদেশি আমাদের দেশে এসেছেনতাঁদের মাধ্যমে আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছেদেশের বাইরে থেকে আসা লোকজন দেশের বিভিন্ন অংশে চলে গেছেনএসব লোকজন বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে এসেছেনঅনেকে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আমাদের এখানে আসছেনতাঁদের স্বজনরা আসছেনঅন্তঃসত্ত্বা নারীরা আসছেন, বয়স্ক লোকেরা আসছেন, দুর্ঘটনায় পড়ে লোকজন আসছেনহয়তো দেখা যাচ্ছে, তাঁদের আত্মীয়স্বজন বিদেশ থেকে এসেছেনওই সব লোকের সংস্পর্শে তাঁরা ছিলেনতখন অসুবিধা হয়নিআমাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছেএই সময়টা কিন্তু আমাদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণএমন একটা রোগী যদি আমাদের হাসপাতালে ঢুকে যায়, তখন কত ডাক্তার, কত নার্স, কর্মচারী ওই রোগীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়যে কারণে একটা ঝুঁকি সব সময় থাকেএসব ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দিয়েছি, যাঁরা ফ্রন্ট লাইনে কাজ করছেনএখন সরবরাহ ভালো রয়েছেসব চিকিৎসক, নার্সসহ সবাইকে পিপিই দিয়েছি

হাসপাতালের এই পরিচালক আরও বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সব সময় সব ক্রান্তিকালে জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছে২৪ ঘণ্টাই সেবা দেওয়া হয়করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি লক্ষ করছিআমাদের রোগী কমে এসেছেকিন্তু রোগীদের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেইযাঁরা ক্রনিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকে আমাদের হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেনরোগীদের আসার প্রবণতা একটু কম লক্ষ করছিআমাদের হাসপাতালে রোগী ভর্তির কোনো সমস্যা নেইঅনেক জায়গায় বেডও দেখছি খালি আছেযেকোনো রোগী এলে আমরা তাকে ভর্তি করবতবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী যদি আমার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায়, আমরা যদি সেটা না জানতে পারি, তাহলে বিপত্তি শুধু চিকিৎসকের নয়, সব রোগীর জন্য ঝুঁকি থাকবেএই ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলোজি বিভাগের করোনাভাইরাস শনাক্তের ল্যাবরেটরি ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য এসকো বায়োসেপটিক্যাল প্লাস টু মেশিন এবং রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন প্রস্তুত করা হয়েছে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলোজি বিভাগের প্রধান সুলতানা সাহানা বানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে আসা ব্যক্তি যখন আমাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসবেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসবেন কিংবা ভর্তি হয়ে গেছেন, এমন রোগীর করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার সুপারিশ পেলে আমরা তাঁর নমুনা সংগ্রহ করবনমুনা সংগ্রহের পর আমরা তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার ফলাফল জানাতে পারব

ভাইরোলোজি বিভাগের প্রধান সুলতানা সাহানা বানু জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া আজ দুজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছেনমারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ এর ওপরে, আরেক ৩০ এর কোঠায়দুজনই এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন

Post a Comment

0 Comments