নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার ৬ উপায়

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার ৬ উপায়

পরিপূর্ণভাবে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খুশু-খুজু তথা নামাজে একাগ্রতা খুবই জরুরি জিনিসকিন্তু বহু নামাজি এ বিষয়ে উদাসীনএর প্রতিকার কী? ইমাম গাজালি (রহ.) তাঁর বিখ্যাত ইহইয়াউ উলুমিদ্দিনগ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেনতিনি ছয়টি বিষয়ের কথা বর্ণনা করেন, যা না থাকলে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায় না

১. নামাজে হুজুরে দিলবা একাগ্র থাকা; এটি নামাজের প্রাণএমনভাবে নামাজ পড়তে হবে যেন আল্লাহ আমাকে দেখছেনরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছআর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কল্পনা ধরে রাখার অনুশীলন করুন যে আল্লাহ আমাকে দেখছেনএভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে নামাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুনরাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না), তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়)’ (নাসাঈ, হাদিস : ১৫১; বুখারি, হাদিস : ১৯৩৪)

২. নামাজে যা কিছু পাঠ করা হয়, তা বিশুদ্ধ উচ্চারণে পড়ার চেষ্টা করুনএটি অন্তরের উপস্থিতিকে আরো দৃঢ় করেঅন্তত সুরা ফাতিহা ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করুনআল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তিলাওয়াত করো’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি সুরা তারতিলসহকারে তিলাওয়াত করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৩, তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৩)

৩. নামাজে আল্লাহর প্রতি তাজিমবা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুনকেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৮) কাজেই ধীরস্থিরতা অবলম্বন করুনআবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করেজিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কিভাবে চুরি করে? তিনি বলেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না  (মুসনাদ আহমাদ, মিশকাত, হাদিস : ৮৮৫)

৪. নামাজে  দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করুনভাবুন, এই নামাজই হয়তো বা আপনার জীবনের শেষ নামাজরাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হাদিস : ৫২২৬)

৫. নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করুনমহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)

এই বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেনরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করেতাই সে যেন দেখে, কিভাবে সে কথোপকথন করছে’ (মুসতাদরাক হাকেম, সহিহুল জামে হাদিস : ১৫৩৮)

৬. নামাজে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে হায়াবা লজ্জাশরম নিয়ে আসুনদণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুনরাসুলুল্লাহ (সা.) (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (তাফসিরে তবারি : ৯/১৯৭)

ওপরের ছয়টি বিষয় অনুসরণ করলে নামাজে মনোযোগ তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহএক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে অজু করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ আগের সব গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৮)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুনআমিন

Post a Comment

0 Comments